মাসুদ আলম: রাজধানীর গ্রিন রোডে  সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় এক নবজাতকের মৃত্যু এবং মা আঁখির মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দায় স্বীকার করা দুই চিকিৎসক হলেন, ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা।

বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। এরপর আসামিরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমীর আদালত আসামি শাহজাদীর এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দার আদালত আসামি মুনার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

এ ঘটনায় বুধবার ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র ঘটনায় একটি মামলা করেন নবজাতকের বাবা ইয়াকুব আলী সুমন। এরপর রাতেই ২ চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নবজাতের মা মাহবুবা রহমান আঁখি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। 

ধানমন্ডি থানার ওসি মো. পারভেজ ইসলাম বলেন, মামলায় ৫-৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন ‘অজ্ঞাত’ আসামিও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মামলায় ডা. সংযুক্তা সাহাকে এজাহারভুক্ত করা হয়নি। তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। 

স্বজনরা জানায়, ইডেন কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবা রহমান আঁখি। ফেসবুকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার নরমাল ডেলিভারি সংক্রান্ত ভিডিও ও পরামর্শ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার কাছে নরমাল ডেলিভারি করাতে চেয়েছিলেন। সেই চাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তার স্বামী।  গত শুক্রবার প্রসব ব্যথা ওঠায় রাত সাড়ে ১২টায় সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় মাহবুবা রহমান আঁখিকে। তখন ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না, তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন। হাসপাতালে ভর্তির পর নরমাল ডেলিভারির জন্য আঁখিকে ৪০ মিনিট ব্যায়াম করানো হয়। রাত ২টার পর আঁখিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। সিজারের পরদিন মারা যায় নবজাতক আর আঁখি  ল্যাবএইড হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। 

আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন বলেন, আমার সন্তানকে মেরে ফেলা হয়েছে, স্ত্রীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুশয্যায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি কাকে নিয়ে বাঁচব? আমাকেও মেরে ফেলুন। আমার বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বন নেই। এখনো তার জ্ঞান ফিরেনি। 

এদিকে আঁখিকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার প্রতিবাদ ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় নীলক্ষেত মোড়ে  মানববন্ধন করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় ‘নবজাতক হত্যার বিচার চাই, মাহবুবার সুচিকিৎসা চাই’, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার বিচার চাই’, ‘চিকিৎসার নামে অর্থ-বাণিজ্য, অবহেলা বন্ধ হোক’ সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গে ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, আমি যেহেতু ছিলাম না, তাই আমার নাম করে এই ধরনের কাজ করে থাকলে এটা অবশ্যই অপরাধ। শুক্রবার সাড়ে ১০টায়  আমি হাসপাতালে শেষ সিজার করে বের হই।  এরপর হাসপাতালের কারো সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়নি। আমি দুবাইতে পৌঁছানোর পরও দেখতে পাইনি রোগী বা হাসপাতাল থেকে কেউ আমাকে কল দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রোগীর পরিবার অনেক কিছুই বলতে পারে, কারণ তারা স্বজন হারিয়েছেন। কিন্তু বাঁচা-মরা তো আল্লাহর ইচ্ছা। আমরা তো ইচ্ছা করে কাউকে মেরে ফেলি না। চিকিৎসক হিসেবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটাই করে থাকি। 

এদিকে সেন্ট্রাল হসপিটালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ডা. আফসানা বিনতে গাউস বলেন, এ ঘটনায় আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সেই সঙ্গে সেদিন ওটিতে যেসব চিকিৎসক-নার্স উপস্থিত ছিলেন, এমন ১১ জনের সবাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সম্পাদনা: শামসুল হক বসুনিয়া